
15/05/2025
শুনতে পাচ্ছেন, স্যার….
একটু রাত হয়ে গেল। অনেক দূর, সেই নয়ডা থেকে এলাম তো। ভাবলাম, আপনি নিশ্চয় জেগে থাকবেন। পড়াশুনো করবেন। তাই এলাম। রামেশ্বরমে। আপনার কবরের পাশে। ভাবলাম, কেউ হয়তো আপনাকে খবরটা দেয়নি। কিন্তু আমি খবরের ফেরিওয়ালা। পয়সা নিয়ে খবর বেচি ঠিকই। পেট চালাতে তো হবে, স্যার। কিন্তু আপনাকে ভালোবেসে খবর দিতে এলাম। জানেন স্যার, আপনার কাছে আজ গোটা দেশ ঋণী। আমিও তো এ দেশেরই নাগরিক। তাই ঋণ শোধ করতে এলাম। না, আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আমি নিইনি। কিন্তু আমি জানতাম আপনি বিরক্ত হবেন না। বরং সেই নৈসর্গিক হাসি মুখে ঝুলিয়ে, অননুকরণীয় ভঙ্গিতে বলবেন, ইয়েস, টেল মি।
জানেন তো স্যার, আপনার ব্রহ্মাস্ত্র পাক বায়ুসেনার হৃদয় বাগিচা, নূর খান, ছাড়খার করে দিয়েছে। বায়ুসেনা মুখে কিছু বলছে না। কিন্তু আমি মহা ছ্যাঁচড়া সাংবাদিক। খবরটা ঠিক বের করেছি। সে সাংঘাতিক কাণ্ড স্যার। ১০ তারিখ ভোর ৪ টে নাগাদ, নূর খানে আসলে আছড়ে পড়েছিল, ব্রহ্মাস্ত্র। ব্রহ্মস। এক বলে খেলা শেষ, স্যার। মাজা ভেঙে মাটিতে পড়ে, ভারতের পা ধরে ফেলল পাকিস্তান। পেঁচো মাতালকে চেলা কাঠ দিয়ে ক্যালালে যেমন নেশা ছুটে যায় না স্যার, পাকিস্তানের তখন সেই দশা। একবার আমেরিকা, একবার চিন, একবার সৌদি আরব, এমনকি ফচকে তুরস্ককেও ফোন করে ফেলেছে। ওদের ওই মুনির আছে না, ক্যাপ্টেন, সে ওয়াক ওভার, ওয়াক ওভার করে চেঁচাচ্ছে। পুরো পয়সা উশুল সিন, স্যার।
১২ তারিখের সাংবাদিক সম্মেলনে বাঘা বাঘা সব সেনা অফিসার এলেন। আমাদের ডিজিএমও সাহেব, লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই, এয়ার মার্শাল এ কে ভারতী, ভাইস অ্যাডমিরাল এ এন প্রমোদ। তাঁরা সব রামচরিত মানস, সাতের দশকের খুনে মেজাজের থমসন আর লিলির গল্প বলে মিডিয়াকে পুরো হিপনোটাইজ করে ফেললেন।কিন্তু নূর খানে ভারত যে ব্রহ্ম দাওয়াই দিয়ে এসেছে, সেসব খোলসাই করলেন না। তবে স্যার, আজ সকাল থেকে ফাঁকফোঁকর গলে খবর চুঁইয়ে আসছিল একটু আধটু। ব্রহ্মস এর কেসটা তারপরই হাতে এল।
সে কী আর আজকের কথা স্যার ! মনে আছে নিশ্চয় আপনার। এই দেখুন, আপনি আমার দিকে তাকিয়ে কেমন মিটিমিটি হাসছেন ! আমিও যেমন আহাম্মক, বাপের কাছে ব্যাটার গল্প করতে এসেছি। আপনি ছাড়া আর কারই বা মনে থাকবে, স্যার। পাক্কা ২৭ বছর আগের কথা। আপনি তখন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের অধিকর্তা। প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল। ১৯৯৮। ১২ ফেব্রুয়ারি। রাশিয়ার এনপিও মাশিনোস্ট্রয়েনিয়া আর ডিআরডিওর মধ্যে চুক্তি সই হল। ভারত রাশিয়া যৌথ উদ্যোগে তৈরি হবে ক্ষেপণাস্ত্র। সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল। ভারতের ব্রহ্মপুত্র আর রাশিয়ার মস্কভা নদীর নাম জুড়ে ক্ষেপণাস্ত্রের নাম রাখা হল ব্রহ্মস। ব্রহ্মাস্ত্র। তারপর শুরু হল আপনার সাধনা। তবে আসল কাজ শুরু প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর আমলে। জর্জ ফার্নান্ডেজ তখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। ১২ জুন। ২০০১।ওড়িশার চাঁদিপুর থেকে প্রথম পরীক্ষামূলক সফল উৎক্ষেপণ। সেদিনের পর কেটে গেছে আড়াই দশক। ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র আজ আরও আধুনিক। শব্দের দ্বিগুণ তিনগুণ তার গতি। প্রায় ৩০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার পাল্লা। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৫ কিলোমিটার উপর দিয়ে উড়তে সক্ষম। আবার মাত্র ১০ মিটার উচ্চতাতেও লক্ষ্যবস্তুকে ধুলো করে দেওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন। অর্জুনের মতো নিখুঁত লক্ষ্যভেদী।
জানেন স্যার, এটা শুনে আপনি খুব খুশি হবেন। তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে আমি তো আজ অবাক। ভারতের কাছ থেকে ব্রহ্মস কিনবে বলে দুনিয়ার ১৭ টি দেশ লাইন লাগিয়েছে। ভারত বলে দিয়েছে, ফার্স্ট কাম, ফার্স্ট সার্ভ। ফিলিপিনস পাবে সবার আগে। তারপর ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, ব্রাজিল, চিলি, আর্জেন্টিনা, মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, কাতার, ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা আর বুলগেরিয়া। ভাবুন স্যার !
আর দুটো কথা বলে উঠব। জমানা বদলাচ্ছে স্যার। যুদ্ধাস্ত্রের ক্ষেত্রে আমরা রাশিয়া নির্ভরতা কাটিয়ে উঠেছি। আমাদের এখন নতুন পার্টনার আমেরিকা, ফ্রান্স, ইজরায়েল। তবে আসল খবর অন্য। ভারত নিজে যুদ্ধাস্ত্র বানাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি সোমবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছেন, ভারতকে নিজের অস্ত্র নিজেকেই বানাতে হবে। মেড ইন ইন্ডিয়া। একটা চমকে দেওয়া খবর দিই স্যার আপনাকে। ২৪-২৫ আর্থিক বছরে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশকে ভারত প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার যুদ্ধাস্ত্র বেচেছে। ২০৩০ শে লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কোটি টাকা। কী হয়েছে জানেন স্যার, প্রধানমন্ত্রী ওই যে ফের একবার মেড ইন ইন্ডিয়া যুদ্ধাস্ত্রের কথা বললেন, মঙ্গলবার বাজার খুলতেই ভারতীয় যুদ্ধাস্ত্র আর যুদ্ধ সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর শেয়ার চড়চড় করে বেড়েছে। ভারত ডাইনামিক্স, মানে ওই যারা আকাশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বানাচ্ছে, তাদের শেয়ার বেড়েছে ১১.৫ শতাংশ। তারপর ধরুন, পশ্চিমবঙ্গের গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ভারত ইলেকট্রনিক্স, কোচিন শিপইয়ার্ড, হিন্দুস্তান এরোনোটিক্স, মাজগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স, পরস ডিফেন্স, সবার শেয়ার বেড়েছে। বাজার বন্ধের সময়, ভারতের বাজারের ডিফেন্স ইনডেক্স বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। ভাবুন স্যার !
এবার স্যার, শেষ পাতে আমসত্ত্বের চাটনি। এই যে আমরা টানা তিনদিন পাকিস্তানের সব চাইনিজ মাল চিচিং ফাঁক করে দিলাম না, ব্যাস, চিনের প্রেস্টিজে ফুল গ্যামাকসিন। মঙ্গলবার চিনের শেয়ার বাজারে রক্তারক্তি কেস। সব যুদ্ধাস্ত্র আর যুদ্ধ সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থার শেয়ার ভোঁ কাটটা। ওদের স্যার ওই এভিআইসি চেংডু বলে কোম্পানিটা আছে না, যারা ওই, জে সিরিজের যুদ্ধ বিমান বানায়, শেয়ার ধসেছে, ৮.৬ শতাংশ। আসলে স্যার, বাজারে খবর, ওদের ওই জে এফ ১৭ যুদ্ধ বিমান নাকি ভারত একটা ঠুকে দিয়েছে। কনফার্মেশন নেই যদিও। কিন্তু অপারেশন সিঁদুর যেভাবে চাইনিজ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে চোনা ঢেলে দিয়েছে, পাবলিক এখন সব বিশ্বাস করছে। তারপর স্যার দেখুন, একটা চাইনিজ মিসাইলও কি ভারতের মাটিতে একটাও ফুটো করতে পারল ? আমাদের আকাশ, টিপ করে করে, মাঝ আকাশেই সব পাংচার করে দিল। আর দেখুন, ওই যে মিসাইল বানায়, চাইনিজ কোম্পানি, ঝুঝও হোংডা, ওদের শেয়ার পড়েছে ৬.৩ শতাংশ। তাহলে, ভালো খবর দিলাম না স্যার, বলুন ?
আচ্ছা স্যার, এবার আসি। আপনার ঘুম পাচ্ছে। ঘুমোন স্যার। প্রণাম।আদাব। শুধু ঘুমানোর আগে জেনে যান, আপনার ভারত বদলাচ্ছে। শক্তিশালী হচ্ছে। নয়া ভারতের ডানায় আজ ইচ্ছেশক্তির আগুন। আপনার গল্পের মতো। Wings of fire….